দেড় বছরেও শেষ হয়নি ড্রেন সংস্কার, দুর্ভোগে বালুচরবাসী
অনিয়ম-দুর্নীতি
প্রকাশঃ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:১৫ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চলাচলের পথ বন্ধ করে রাস্তার ওপর গেইট ও দেয়াল নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকায় ব্যাপক উত্তেজনার চলছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই অভিযুক্ত পক্ষের বাড়িতে গিয়ে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খানের ভুরিভোজের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে ওসি (তদন্ত) রঞ্জন কুমার ঘোষও ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এতে অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভুরিভোজের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওসি নিজেই। তিনি বলেন, এটি একটি সামাজিক সৌজন্যতা ছিল। এর সঙ্গে চলমান বিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালারুকা ইউনিয়নের মাহমদপুর মৌজার জেএল নং ২৬৩, খতিয়ান নং ১১১, দাগ নং ৭২৫-এর সাড়ে ৩১ শতক ভূমির মালিক মৃত মদরিছ আলীর তিন ছেলে—শফিক মিয়া, রফিক মিয়া ও মাসুক মিয়া। ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত এ জমি দখলের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছেন একই গ্রামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আশিকুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান ও হাসানুর রহমান পুষ্পের নেতৃত্বাধীন একটি প্রভাবশালী চক্র। সম্প্রতি জমির একাংশে ভুক্তভোগী আটটি পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় গেইট ও দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ভুক্তভোগী শফিক মিয়া বাদী হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি বিবিধ মোকদ্দমা দায়ের করেন। শুনানি শেষে আদালত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ওই জমিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদানের আদেশ দেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাতক থানার এসআই মহিউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে আদালতের নোটিশ পৌঁছে দেন। কিন্তু নোটিশ পাওয়ার পরও প্রতিপক্ষ আদালতের আদেশকে অগ্রাহ্য করে গত তিন দিন ধরে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী শফিক মিয়া বলেন, ‘ওসি আইন প্রয়োগে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং তিনি অভিযুক্তদের হয়ে কাজ করছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় ওসি শফিকুল ইসলাম খান এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত ওসি (তদন্ত) রঞ্জন কুমার ঘোষ অভিযুক্ত আরিফুর রহমানদের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত খাচ্ছেন। এই ছবি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ভূমি সংক্রান্ত এই বিরোধের জেরে তাদের বিরুদ্ধেই উল্টো চাঁদাবাজি ও ফৌজদারি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে প্রতিপক্ষ। বিষয়টি একাধিকবার থানা পুলিশকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি ১৮ সেপ্টেম্বর তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে গেলেও তা গ্রহণে গড়িমসি করে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় নি বলে অভিযোগ তাদের।
তবে পুলিশের দাবি, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ছাতক থানার এএসআই মহিউদ্দিন জানান, ‘উভয় পক্ষকে নোটিশ দেওয়ার পর আমি খবর পেয়েছি যে সেখানে নির্মাণকাজ চলছে। বিষয়টি আমি ওসি স্যারকে জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান ভুরিভোজের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এটি একটি সামাজিক সৌজন্যতা ছিল এবং এর সঙ্গে চলমান বিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো পক্ষকে অন্যায় সুবিধা দেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
ছাতক, পুলিশের ভুরিভোজ