দেড় বছরেও শেষ হয়নি ড্রেন সংস্কার, দুর্ভোগে বালুচরবাসী
অনিয়ম-দুর্নীতি
প্রকাশঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
একসময় হাওরের শান্ত শহর নামে পরিচিত সুনামগঞ্জ আজ পরিণত হয়েছে যানজট, দুর্ঘটনা ও বিদ্যুৎ সংকটে ভরা শহরে। মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের এই শহরে চলাচল করছে কয়েক হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক, যা সাধারণ নাগরিকদের জন্য দিন শুরুতেই ভোগান্তিতে পরিণত হচ্ছে।
শহরের ট্রাফিক মোড়, হাসপাতাল রোড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও নতুন ব্রিজ এলাকায় সকাল-বিকেল যানজট এখন নিয়মিত দৃশ্য। অফিসগামী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন সময় নষ্ট করছেন। অনেক সময় এমন জ্যামে অ্যাম্বুলেন্সও আটকে যায়।
শহরের চাকরিজীবী ওবায়দুল জানান, ৫-৬ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলে এই শহরে। এতে যানজট তো আছেই, লোডশেডিংও বেড়েছে।
শিক্ষার্থী জাবেদ আহমেদ বলেন, প্রতিটি এলাকায় বানিজ্যিকভাবে চার্জিং চলছে, এজন্যই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছি।
জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের তথ্যমতে, পুরো জেলায় ৭-৮ হাজার ইজিবাইক এবং ১-১.৫ হাজার অটোরিকশা রয়েছে। কিন্তু সচেতন মহল মনে করেন, বাস্তবে এই সংখ্যা পাঁচ গুণেরও বেশি।
জেলা ইজিবাইক মালিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুহেল আহমদ বলেন, “শুধুমাত্র পৌর এলাকায় নিবন্ধিত ইজিবাইকের সংখ্যা ১৩০০, অটোরিকশা প্রায় ১০০০। এর বাইরে কত চলছে, বলা মুশকিল।”
ইজিবাইক চালক আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে গাড়ি চালাই, কিন্তু অবৈধ গাড়িগুলো শহরে ঢুকে আমাদের রুটি-রুজি কেড়ে নিচ্ছে। প্রশাসনের উচিত এগুলো আটক করা।” পথচারী তানভীর আহমেদ যোগ করেন, “ট্রাফিক পুলিশ ধরলেও আবার ছেড়ে দেয়। কঠোর শাস্তি চাই।
বাইকার রাকিব বলেন, মহাসড়কে ইজিবাইক সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। হেডলাইট ছাড়া, সিগন্যাল মানে না—যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” শিক্ষার্থী জিহান জুবায়ের মন্তব্য করেন, “শহরে হাঁটার জায়গা নেই। বৈধ গাড়ির চেয়ে অবৈধ গাড়ি বেশি।
মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, “অটোরিকশা চালকদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। হঠাৎ যাত্রী তুলতে গাড়ি থামিয়ে দেয়, তখনই জ্যাম হয়।” ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আলম পিয়াল মনে করেন, “৫ মিনিটে যাওয়ার পথ এখন ২০ মিনিট লাগে। স্কুল ছুটির সময়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ।”
বিদ্যুতের ওপরও চাপ বাড়ছে। তবে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ লোকমান হোসেন দাবি করেন, “ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চার্জে তেমন কোনো ঘাটতি নেই। গ্রীষ্মকালে চাপ থাকে। অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো: হানিফ মিয়া বলেন, ৯৯ শতাংশ যানবাহনের নিবন্ধন আছে। সাবেক মেয়র অবৈধ গাড়ি বৈধ করেছেন। প্রায় ২৭০০ নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। ছোট শহরের জন্য এটি যেন ক্যান্সারের মতো। বাহিরের উপজেলা থেকে আসা অনিবন্ধিত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন অভিযান চলছে।
সুনামগঞ্জ পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, রাস্তার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। অবৈধ গাড়ির সংখ্যা নিবন্ধিতের তুলনায় বেশি। সম্প্রতি দুই দফা অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করেছি। শহরের প্রবেশপথে নিয়ন্ত্রণ থাকলেই নাগরিক ভোগান্তি কমবে।
সুনামগঞ্জ, অটোকরিশকা-ইজিবাইক, পুলিশ, যানজট, সিলেট