গত নভেম্বরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার ১০ মাস পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)  আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্ব) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ছাত্র রাজনীতির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মমিনুর রশিদ শুভ বলেন, “আমার কাছে ছাত্র রাজনীতি মানে কেবল আন্দোলন-সংগ্রাম নয়—বরং এটি হলো নেতৃত্ব গড়ার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র। যদি ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সম্মান করে, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণমুখী রাজনীতি করে, তবে তারাই দেশের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং নিজেদেরকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গড়ে তুলতে পারবে।”

“তাই আমার বক্তব্য পরিষ্কার—ছাত্র রাজনীতি চালু থাকতে হবে, তবে তা হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব, কল্যাণমুখী এবং দায়িত্বশীল। কেবল তখনই আমরা আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারবো।”

সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিলো। আজ ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে প্রশাসন। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এদেশের অনেক শিক্ষার্থীদের  ক্যারিয়ার, স্বাভাবিক জীবন, এমনকি জীবন পর্যন্ত কেড়ে নিছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মনে ভয় আবার কি সেই বিভীষিকাময় রাজনীতি ফিরে আসছে ক্যাম্পাসে। আবার কি আমাদের অবস্থা আবরার ফাহাদ বা বিশ্বজিতের মত হতে যাচ্ছে?”

রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, “৫ই আগস্টের পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে সামনে শাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দাবির ভিত্তিতে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”
“তবে আমার প্রত্যাশা থাকবে ছাত্রসংগঠনগুলো যেনো অতীতের মতো কলমের পরিবর্তে মাফিয়াতন্ত্র, দখলবাজি ও অস্ত্রের চর্চা চালু না করে।একাডেমিক কার্যক্রম যেনো কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় শিক্ষার্থীদের উপর কোনো রাজনৈতিক আদর্শ জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া না হয়। অর্থাৎ, ছাত্ররাজনীতি যেনো শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক চর্চার জায়গায় থাকে, ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা সহিংসতার জায়গায় নয়।”

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জিদান বলেন, “ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া মানে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ রুদ্ধ করা। আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে এমন এক ছাত্র রাজনীতি চাই, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করবে, তাদের সমস্যার কথা বলবে এবং প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে। আমরা চাই, ক্যাম্পাসে এমন একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি হোক,যেখানে প্রতিটি সংগঠন শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, সুযোগ-সুবিধা ও মানসম্মত শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।”

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে একটি আলোচিত বিষয়। একদিকে এটি তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বের শিক্ষা দিয়ে গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে সহিংসতা ও দলীয়করণের কারণে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।‎ছাত্র রাজনীতি বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সময় এসেছে এটিকে সহিংসতা ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থে ব্যবহার করার। অন্যথায় শিক্ষার পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।”

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

তথ্যপ্রযুক্তি-শিক্ষা থেকে আরো পড়ুন

সিলেট, শাবিপ্রবি, ছাত্র রাজনীতি, নিষিদ্ধ, প্রতিক্রিয়া