লাখাইয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পীরা
ধর্ম
প্রকাশঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আসছে পঞ্চমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে পূজার মূল পর্ব।
এর আগের দিন, ২৭ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমীতে দেবীপক্ষের আবহে মণ্ডপে মণ্ডপে বাজবে ঢাক-ঢোল।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব ঘিরে সিলেটে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। এবার ৬১৮টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। ইতোমধ্যে সিলেট নগর ও জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে প্রতিমা নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
শিল্পীদের তুলি ও রঙের আঁচড়ে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। সাজসজ্জার কাজও চলছে পুরোদমে। প্রতিমা গড়া, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, চণ্ডীপাঠ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, ভজনকীর্তনসহ পূজার যাবতীয় প্রস্তুতি এখন শেষ মুহূর্তে। আয়োজক কমিটিগুলো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেষ নান্দনিক আয়োজনের কাজে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সিলেট জেলা ও মহানগরে মোট ৬১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে সার্বজনীন ১৪২টি ও পারিবারিক ২০টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলায় সার্বজনীন ৪২৭টি ও পারিবারিক ২৯টি পূজা হবে।
সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা অনুষ্ঠিত হবে জকিগঞ্জে (৮৪টি সার্বজনীন ও ১টি পারিবারিক)। এছাড়া গোলাপগঞ্জে ৬২টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৪২টি, বিয়ানীবাজারে ৫৪টি, ওসমানীনগরে ৪০টি, গোয়াইনঘাটে ৪০টি, কানাইঘাটে ৩১টি, কোম্পানীগঞ্জে ২৭টি, বিশ্বনাথে ২৪টি এবং জৈন্তাপুরে ১৯টি মণ্ডপে পূজা হবে।
অন্যদিকে সিলেট মহানগরের কোতোয়ালী মডেল থানায় সর্বাধিক ৪১টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট থানায় ৪১টি, শাহপরাণ থানায় ২৫টি, মোগলাবাজারে ২০টি, জালালাবাদে ২০টি এবং দক্ষিণ সুরমায় ১৫টি পূজা হবে।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এবার দেবীর আগমন ঘটছে গজে (হাতি) আর গমন হবে দোলায় (পালকি)। শাস্ত্রমতে দেবীর আগমন গজে হলে সমৃদ্ধি আসে, আর গমন দোলায় হলে রোগ-শোক বাড়ে।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমী, ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পালিত হবে।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় বেশ কড়া নিরাপত্তা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেট জেলা ও মহানগের পুলিশের পাশাপাশি, সাদা পোশাকে মাঠে থাকবেন তারা। এছাড়া প্রতিটি পূজা মণ্ডপকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং প্রতি পাড়া মহল্লায় নিয়মিত ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি করা হবে, সেই সাথে যেকোন প্রয়োজনে পুলিশের সকল হট লাইন নাম্বারগুলো সক্রিয় থাকবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে স্যোশাল মিডিয়া ‘ওয়াটসএ্যাপ’ প্লাটফর্মে একটি গ্রুপও খোলা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সরকারি নির্দেশনা মানার জন্য আয়োজকদের অবগত করা হয়েছে, এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগসহ সবরকমের ব্যবস্থা নিতে প্রতিটি মণ্ডপকে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করি, এবারও পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেটে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সিলেট ভয়েসকে বলেন, শারদীয় দূর্গাপূজা নির্বিঘ্নে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে অনুষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়ে। এবার সিলেটে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার বাহিনীরর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ডপে দায়িত্ব পালনকারী স্বেচ্ছাসেবক পরিচয় নিশ্চিতের জন্য হাতে আর্মড ব্যান্ড পরিধান করনোসহ পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও হটলাইন নম্বর চালু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, পাড়া মহল্লায় পরিবেশ ঠিক রাখতে ড্রোন উড়ানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ে নিয়োজিত থাকবে এসএমপি’র সাইবার টিম। এছাড়াও যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
দুর্গাপূজা , সনাতন ধর্মাবলম্বী, উৎসব, সিলেট