কমলা-আনারসের জন্য বিখ্যাত সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বৃহত্তর জলঢুপ এলাকায় বানিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে রাম্বুটান ফল। অনুকূল আবহাওয়া ও মাটির বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে বিদেশি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ রাম্বুটান ফল এতাদঞ্চলে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। শখের বশে শুরু হলেও এই ফলের উচ্চ বাজারমূল্য ও ব্যাপক চাহিদা দেখে অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে রাম্বুটান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

এমনই একজন উদ্যোক্তা হচ্ছে উপজেলার জলঢুপ পাটুলি গ্রামের শৌখিন চাষী ফয়জুর রহমান। তার বাগানের ৭০টির বেশিও গাছে এবার বাম্পার ফলন এসেছে। দেশে-বিদেশে বিপুল চাহিদা থাকায় রাম্বুটান চাষ করে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন ফয়জুর রহমানের মতো স্থানীয় এলাকার অনেক চাষী।

রাম্বুটান ফল দেখতে অনেকটা লিচু ও ড্রাগন ফলের মতো। ফলের পাশাপাশি ওষুধি গাছ হিসেবেও এটি পরিচিত। এটি খেতে খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। আগের মতো উৎপাদন না থাকলেও জলঢুপ এলাকা কমলা-আনারসের জন্য দেশজুড়ে বিখ্যাত। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হবার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে বিদেশি ফল রাম্বুটান। রাম্বুটান চাষ করে সমগ্র দেশজুড়ে এ অঞ্চলের পরিচিত আরও বাড়াতে চান চাষী ফয়জুর রহমান।

ফয়জুর রহমান জানান, ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার সময় শখ করে নিয়ে এসেছিলেন রাম্বুটানের চারা। সেই একটি চারা থেকেই বর্তমানে তিনি সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যাণিজিক রাম্বুটান ফল বাগানের মালিক তিনি। এখন তার বাগানে রয়েছে পরিপক্ক শতাধিক চারা, তন্মধ্যে এ মৌসুমে ৭০টিরও অধিক চারায় ফলন এসেছে। 

জানা গেছে, জলঢুপ এলাকায় ২০১০ সালে প্রথম রাম্বুটানের চারা রোপন করেন ফয়জুর রহমান। ৪ বছর পর তার চারায় প্রথম ফলন আসে। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি তাকে। উচ্চমূল্য সম্পন্ন রাম্বুটান বিক্রি করে প্রতি সিজনে ভালো টাকা আয় হয় তার। বর্তমানে তার বাগান থেকে উৎপাদিত রাম্বুটান দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে, যেখানে বাজারদর কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত।

জলঢুপের মাটি রাম্বুটান চাষের জন্য বেশ উপযোগী জানিয়ে ফয়জুর রহমান জানান, রাম্বুটান চারা রোপনের পর পরিচর্যা ও খরচ দুটোই কম, তবে খরা মৌসুমে প্রয়োজনভেদে নিয়মিত সেচ দিতে হয়। শুধু ফল নয়, তার বাগান থেকেই উৎপাদিত চারা সংগ্রহ করছেন আগ্রহী কৃষক ও উদ্যোক্তারা। রাম্বুটানের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও এর লোমশ খোসা ও ভিন্ন স্বাদের কারণে এই বিদেশি ফল এখন বাংলাদেশের মাটিতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

মূলত মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় চাষ হওয়া রাম্বুটান ফল এখন বাংলাদেশের কৃষি খাতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। স্থানীয় যুবকদের মধ্যে ইতোমধ্যে এই বাগান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় এলাকার শৌখিন চাষী ও ক্রীড়া সংগঠক ফয়সল আলম ডালিম জানান, রাম্বুটান ফল খেতে খুব সুস্বাদু। এতে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। বর্তমানে ফয়জুর রহমানের মতো স্থানীয় এলাকার আরও অনেকেই শখ ও বানিজ্যিক উদ্যোগে রাম্বুটান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।  বিশেষ করে এই ধরনের উদ্যোগ কৃষিকে আবারও একটি আকর্ষণীয় ও লাভজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে রাম্বুটান ফলের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, শৌখিন চাষী ফয়জুর রহমানের বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ফলের ভারে নুয়ে পড়া রাম্বুটানের গাছগুলো। সবুজ রঙের পাতার ফাঁকে ফাঁকে রাম্বুটান ফলগুলো দেখতে চমৎকার লাগছে। ফয়জুর রহমান তার বাগানে রাম্বুটান ছাড়াও মাল্টা, আনারস, কলা, আম, পেয়ারা, কাগজি লেবু, জারা লেবুসহ নানা জাতের ফলও বানিজ্যিক উদ্যোগে চাষ করেছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সাথে সাথে পূরণ হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাম্বুটান শীতপ্রধান এবং বৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় চাষ করা সম্ভব। উঁচু এটেল দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে রাম্বুটানের ফলন ভালো হয়। তব্র বন্যা কবলিত অঞ্চল রাম্বুটান চাষের অনুপযোগী। বসন্তের শেষ দিকে এ গাছে মুকুল আসে এবং আর গ্রীষ্ম-বর্ষায় ফল পাঁকে। তবে মুকুল ফোঁটা থেকে ফল পাঁকতে প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। গাঢ় সবুজ রঙ থেকে ফলটি পাঁকার পর লাল রঙ ধারণ করে, দেখতে অনেকটা ড্রাগন ও লিচু ফলের মতো মনে হয়। এক একটি রাম্বুটান গাছ প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। 

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লোকমান হেকিম বলেন, ‘বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষে বেশ সফল স্থানীয় কৃষক ফয়জুর রহমান। তার এ সফলতা আশা জাগিয়েছে এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও। বর্তমানে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় বানিজ্যিক রাম্বুটান বাগান এটি। আমরা স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষক ফয়জুর রহমানকে পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সহযোগিতা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় সুস্বাদু ফল রাম্বুটান চাষে অন্য কৃষকরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।’

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

কৃষি থেকে আরো পড়ুন

সিলেট, বিয়ানীবাজার, রাম্বুটান, কৃষি