দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামো ও সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও সিলেট বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক সংকট দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। চার জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র কনসালট্যান্টের ৭৬৭টি পদের মধ্যে ৪৪২টিই শূন্য। 

 

এতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে প্রান্তিক মানুষ প্রত্যাশিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে সিলেটের দুর্গম ও হাওরাঞ্চলের মানুষজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

 

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসক ঘাটতির কারণে সিলেট অঞ্চলের সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে। উপজেলাভিত্তিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও রোগীদের জেলা সদর কিংবা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে এসব হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। 

 

অন্যদিকে জরুরি অবস্থায় চিকিৎসক না পাওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে প্রায়ই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় দ্রুত এই সংকট কাটিয়ে তোলার দাবি সেবাপ্রত্যাশীদের। 

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যানুসারে, সিলেট বিভাগের ৩৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি ২০ শয্যার হাসপাতাল ও ৮৫টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক সংকট এখন চরম আকার নিয়েছে। ৫২৬টি মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২২৫ জন। অর্থাৎ ৩০১টি পদ ফাঁকা। 

যার মধ্যে সিলেট জেলায় ১৭১ পদের বিপরীতে কর্মরত ১০২ চিকিৎসক, সুনামগঞ্জে ১৩৩ জনের স্থলে আছেন মাত্র ৫৭ জন, হবিগঞ্জে ১১৯ পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৪৪ চিকিৎসক, মৌলভীবাজারে ১০৩ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২২ চিকিৎসক।

 

একইভাবে জুনিয়র কনসালট্যান্টের ২৪১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১১০ জন। বাকি ১৩১টি পদ শূন্য। সিলেটে ৮৬ পদের মধ্যে আছেন ৪৫ জন, সুনামগঞ্জে ৬১ পদের বিপরীতে ১৮ জন, হবিগঞ্জে ৫৪ পদের মধ্যে ২২ জন এবং মৌলভীবাজারে ৪০ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৫ জন।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‍হাওর এলাকা ও দুর্গম উপজেলায় কর্মরত থাকতে অনীহা প্রকাশ করেন বেশিরভাগ চিকিৎসক। ফলে শূন্যপদ পূরণ হলেও কিছু দিনের মধ্যে আবার সংকট দেখা দেয়। এ অবস্থায় প্রান্তিক মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে। 

 

হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গিয়ে বহু রোগীকে আমাদের সিলেট পাঠাতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার ফলে আমরা অনেক সময় রোগিকে সিলেটে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হই। এছাড়া অনেক সময় চিকিৎসকরা আসেন কিছুদিন কাজ করেন পরে আবার চলে যান ভালো শহরে। এতে করে চিকিৎসকের সংকট কাটছেই না। 

 

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘সিলেটে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি প্রতি মাসে চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রনালয়কে অবগত করি। আশার খবর হচ্ছে আমরা শীঘ্রই ১৬ জন মেডিকেল অফিসার পাবো সিলেট বিভাগের জন্য। কিছুদিন আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব সিলেট এসেছিলেন তখনও উনাকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি জানিয়েছেন-সামনে বিসিএস পরীক্ষার পর আরও মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে তখন সিলেটও পাবে।’

Single News Bottom

শেয়ার করুনঃ

যাপিতজীবন থেকে আরো পড়ুন

সিলেট, চিকিৎসক সংকট, পদ শূন্য