
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা ঘিরে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিতে তৃণমূলে চলছে মৃদু গুঞ্জন থেকে প্রকাশ্য সমালোচনা।
৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চারটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে সিলেট-৬ আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
কিন্তু ঘোষণার পরপরই ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে অসন্তোষ। স্থানীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূল কর্মীদের বড় একটি অংশ এমরান আহমদ চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা, নির্বাচনী সক্ষমতা ও অতীত রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, তিনি সাংগঠনিকভাবে ভালো হলেও ভোটের রাজনীতি বোঝেন না। আমরা বিপাকে পড়ে গেছি। গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক নেতার ভাষায়, মানুষ জিজ্ঞেস করে আমরা আশা করলাম কী, আর পেলাম কী! এমন হতাশা আগে দেখিনি।
গত শনিবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজারে আয়োজিত আলোচনা সভায়ও নেতাকর্মীরা খোলাখুলিভাবে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার ‘নিরপেক্ষ রিভিউ’ চেয়ে বক্তব্য দেন। সভায় উপস্থিত প্রায় সব বক্তাই প্রার্থী পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ ২০১৪ সালের গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমরান চৌধুরী জামায়াত প্রার্থীর কাছে বড় ব্যবধানে হারেন। এ রেকর্ড প্রমাণ করে তিনি ভোটের রাজনীতিতে দুর্বল। তাদের প্রশ্ন যিনি উপজেলায় জিততে পারেননি, তিনি জাতীয় নির্বাচনে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি, আচরণগত বিতর্ক এবং স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব নিয়েও অস্বস্তি বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, নিজ উপজেলা থেকে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে না পেরে তিনি অন্য উপজেলা থেকে লোক এনে উপস্থিতি দেখানোর চেষ্টা করছেন।
এ এলাকার রাজনীতিকে আরো জটিল করেছে গত বছর শহীদদের হত্যা মামনাকে কেন্দ্র করে ‘মামলা বাণিজ্য’-এর অভিযোগ। নেতাকর্মীদের দাবিএই মামলা ঘিরেও এমরান চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
বিগত ৪৫ বছরে বিএনপি কখনো সিলেট-৬ আসনে জয় পায়নি। ২০০১ সালে স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া—পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তার উন্নয়ন-অবদানকে সামনে রেখে দলের একটি অংশ তার মেয়ে সৈয়দা আদিবা হোসেনকে প্রার্থী করার দাবি তুলছে। তাদের যুক্তি তিনি তরুণ ও নারী ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় এবং অধিক গ্রহণযোগ্য।
অন্যদিকে দলের আরেক অংশ ২০১৮ সালের প্রার্থী ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ চৌধুরীর পক্ষে। তাদের মত ফয়সাল দীর্ঘদিন ধরেই সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত এবং নির্বাচনী মাঠ সম্পর্কে অভিজ্ঞ।
স্থানীয় নেতাদের উদ্বেগ সিলেট-৬ একটি অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন। জামায়াত এখানে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। একজন উপজেলা পর্যায়ের নেতা বলেন, “জামায়াত খুব শক্ত অবস্থানে আছে। বিএনপি ভুল প্রার্থী দিলে আসন হাতছাড়া হবেই। এমন কাউকে প্রয়োজন, যাকে ভোটাররা চেনে ও মানে।”
মনোনয়ন ঘোষণার পর এলাকায় যে নীরবতা নেমে এসেছে, তা স্পষ্ট সংকেত দিচ্ছে—লড়াই এখনো স্থিতিশীল নয়। তৃণমূলের দাবি—গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বাছাই করলে বিএনপি এ আসনে আবারো প্রতিযোগিতায় ফিরতে পারে।
সম্ভাব্য প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে মনোনয়ন দিয়ে দল সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। কিছু লোক অভিমান করে আছে, শিগগিরই তারাও ধানের শীষ নিয়ে মাঠে নামবে।
শেয়ার করুনঃ
নির্বাচন থেকে আরো পড়ুন
সিলেট, সিলেট-৬, বিএনপি, এমরান আহমদ


