সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দীর্ঘ দেড় যুগ পর নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পেয়ে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে বেশ ফুরফুরে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে দলের মনোনীত প্রার্থী ভোটারদের মন জয় করতে দিনে-রাতে কাজ করছেন। 

 

অথচ এখনও প্রার্থীতা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিএনপি। সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সুনামগঞ্জ-২ ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এ অবস্থায় সুনামগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এর প্রভাব পড়ছে ভোটের মাঠে। 

 

কিন্তু কোন কারণে বিএনপি এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি তা স্পষ্ট করেনি দলের হাইকমান্ড। অবশ্য এই আসনটি বিএনপি শরিকদের কখনও ছেড়ে দেওয়ার রেকর্ডও নেই। যে কারণে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখনও আশাবাদী। 

 

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, এবার হয়তোবা প্রথমবারের মতো এই আসনটি বিএনপি জোটের শরিকদের হাতে ছেড়ে দিতে পারে। যার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। 

 

তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধারণা, সাবেক সংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অসুস্থতার কথা চিন্তা করে হয়তো এখন পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি দল। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

 

অন্যদিকে গুঞ্জন রয়েছে-জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আইনজীবী শিশির মনিরের কথা চিন্তা করে এই আসনে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি বিএনপি। 

 

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল, সাবেক সংসদ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী রুমি, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদ ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য আলী আকবর চৌধুরী। 

 

জানা গেছে, বেশকিছু দিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে শিগগিরই তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। নাছির উদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন তিনি। তাই স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকে ধারণা করছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো তারই সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

 

নির্বাচনের মাঠে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অনুপস্থিতিতেও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর নিজ বলয়ের নেতাকর্মীরা। এতে করে তাকে নিয়েই চলছে বেশ জল্পনা-কল্পনা। 

 

এদিকে নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ততো বেড়েই চলেছে। আসনটিতে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে সবাই এখন দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন। 

 

আসনটিতে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা, দিরাই উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল। গত কয়েক বছর ধরে তিনিও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছিলেন।

 

আসনটিতে প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী রুমি। কয়েক বছর ধরে তিনিও নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছেন। 

 

অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল সিলেট ভয়েসকে বলেন, 'দিরাই-শাল্লায় প্রার্থী ঘোষণা না করার মূল কারণ একমাত্র নীতিনির্ধারকরা বলতে পারবেন। সুনামগঞ্জ-২ আসন কখনো জোটবদ্ধ হয়নি। এবারও আশা করা যায় জোটবদ্ধ হবে না। তবে সিনিয়র নেতা হিসেবে নাছির চৌধুরীর কথা দল ভাবতেই পারে। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং ব্যাংককে চিকিৎসাধীন আছেন।'

 

তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই নাছির উদ্দিন দিরাই-শাল্লায় সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছেন। সিনিয়র সদস্য হিসেবে দল হয়তো তাঁর পরামর্শ নিতে পারে। এর আগে তিনিও তিনবার ধানের শীষ প্রতীকে এই আসনে নির্বাচন করেছেন। দিরাই-শাল্লার ব্যাপারে দল অতি শিগগিরই চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে পারে।'

  

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে আমি বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে দিরাই-শাল্লায় আমি নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যচ্ছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি প্রাথমিকভাবে দলের প্রার্থী মনোনীত হয়েছিলাম। সবসময় সুখে-দুঃখে এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্ঠা করেছি। এলাকার স্বার্থে কাজ করেছি। আশা করি, দল আমাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।’ 

 

‎অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী রুমি বলেন, ‘দিরাই-শাল্লায় বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এ জন্য হয়তো এখনও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না। ১৯৯৬ এর দিকে আমি বিএনপি থেকে এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম৷ তবে বিভিন্ন কারণে সে সময় সংসদ ভেঙে যায়।’ 

 

‎তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে কোনো জোট হয়নি। তাই আসনটি জোটবদ্ধ হবে বলে আমার মনে হয় না। আপাতত আমি ঢাকায় আছি- তবে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 

 

বিএনপির সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গৌছ সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। কয়েকটি আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন যারা সবাই যোগ্য। স্থানীয় পর্যায়ে যেহেতু প্রতিযোগিতা আছে তাই একেকজন একেক মন্তব্য করবে। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’ 

 

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের রাষ্ট্র বড়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দল যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত কিংবা প্রার্থীকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। দল যে সিদ্ধান্ত নিবে দিনশেষে আমরা সবাই এক।’


শেয়ার করুনঃ

নির্বাচন থেকে আরো পড়ুন

সুনামগঞ্জ-২ আসন, বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা, দিরাই শাল্লা নির্বাচন, তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল, মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী রুমি