ছবিঃ কামরুজ্জামান কামরুল

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করছে। 

আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হককে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুজ্জামান কামরুল দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম- জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পাঁচ দফা জরিপ ও তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আনিসুল হকের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। এসব জরিপের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার মাধ্যমেও সম্পন্ন হয়। জরিপে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা, আন্দোলনে ভূমিকা, গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিশ্লেষণ করা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় আনিসুল হকের নাম চূড়ান্ত ঘোষণা করা হলেও, কামরুজ্জামান কামরুল সম্প্রতি মোটরসাইকেল শোডাউন নিয়ে এলাকায় প্রবেশকে অনেকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে মনে করছেন। তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীরা বিভিন্ন ফেইক আইডি ও অনলাইন পেজের মাধ্যমে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

তবে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কোন ঘোষণা তিনি দেননি। বরং তার বক্তব্যে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকারও করেছেন।


তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে নদী ইজারা বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অর্থ পাচারের। দলীয় রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টদের দাবি, এসকল অভিযোগের কারণেই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন কামরুল।

কামরুল তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির নেতা জুনাব আলী ও তার ভাই আলী আহমদের মাধ্যমে যাদুকাটা নদী, কুটগাড়ি, কয়লা ঘাট, বিআইডব্লিউটিএ, নৌকাঘাট ও বিভিন্ন জলমহাল থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সাবেক ইজারাদার রতন মিয়ার কাছ থেকেও তিনি দৈনিক ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া, বর্তমানে যাদুকাটা নদীর ইজারাদার নাসির মিয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বানিজ্যিক নৌকা থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। 


স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কামরুল কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে স্থানীয় আওয়ামী নেতা সেলিম মিয়া ও আজাদ আহমেদের সঙ্গে সমঝোতায় এসে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেলিম মিয়ার নামে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও কামরুলের প্রভাবে জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনও পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গণে অনেকের দাবি, ১/১১ এর সময় কামরুল দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান, পরে আবেগপ্রবণ নাটকীয়তায় দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি আবারও বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে টাকা দাবি করছেন- এই মর্মে যে, “দল এখনও চূড়ান্তভাবে কাউকে নমিনেশন দেয়নি, আমি টাকা দিয়ে হলেও নিয়ে আসব'। 

স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও দলীয় নেতারা বলছেন, কামরুজ্জামান কামরুল যদি নমিনেশন পান, তবে এলাকায় বিএনপির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনগণ মনে করে, তার অতীত কর্মকাণ্ড, অর্থ পাচার, ও চাঁদাবাজির ইতিহাস তাকে নির্বাচনে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।

তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, এ সব বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি সব সময় দলের প্রতি অনুগত।


শেয়ার করুনঃ

নির্বাচন থেকে আরো পড়ুন

সুনামগঞ্জ-১, তাহিরপুর, কামরুজ্জামান কামরুল, জাতীয় নির্বাচন