সুনামগঞ্জে ১১৭ কোটি টাকার ঘাস চাষ প্রকল্প শুধু কাগজেই সফল
কৃষি
প্রকাশঃ ১৭ মে ২০২৫
শুরুটা ২০১৮ সালে। নিজের একখণ্ড কৃষিজমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করেন রফিকুল ইসলাম। তাতে ফলনও ভালো মিলে। সেই থেকে বড় পরিসরে ভুট্টা চাষের স্বপ্ন দেখা শুরু। কাজ করতেন কৃষি ব্যাংকের স্থানীয় একটি শাখায়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বাজারে সামান্য বেতনে সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হতো খুব। তাই পিয়নের কাজের ফাঁকে ভাবতেন কিভাবে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরানো যায়। অবশ্য ভাবনার সব অংশে জুড়ে ছিল ভুট্টা চাষ।
কিন্তু স্বপ্ন পূরনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ালো মূলধন। যা রফিকের পক্ষে যোগান সম্ভব ছিলনা। তবুও দমে যাননি রফিক। দ্বারস্থ হোন যেখানে তিনি কর্মরত আছেন সেই ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে। বলেন তাঁর স্বপ্নের কথা। রফিকের উদ্দেশ্য ও আগ্রহের কথা শুনে ব্যাংক ম্যানেজার স্বল্পহারে দুই লাখ টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে। সেই টাকা দিয়ে ১৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে শুরু করে ভুট্টা চাষ।
ততোদিনে ব্যাংকের পিয়নের কাজটা ছেড়ে দেই সে। একপর্যায়ে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় চারশো মণ ভুট্টা ঘরে তুলে রফিক। যার বর্তমান বাজারমূল্য চার লাখ টাকারও বেশি।
রফিকুল ইসলাম সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত ও সীমান্ত উপজেলা তাহিরপুরের বড়দল উত্তর ইউনিয়নের বারহাল গ্রামের বাসিন্দা। ভুট্টা চাষ করে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। রফিকুল আজ গ্রামের অন্য কৃষকদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। তাঁর ভুট্টা চাষে সফলতা দেখে অন্যরাও ঝুঁকে পড়েছেন এ কাজে।
সরেজমিনে রফিকুলের ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, দশ থেকে বারোজনের একটি দল জমি থেকে ভুট্টা তুলে ঝুড়িতে রাখছে। আরেকদল ভুট্টাভর্তি ঝুড়ি মাথায় করে জমির অদূরে এক জায়গায় স্তুপ করে জমা করছে। পরে ভুট্টার বাহিরের খোসা ছাড়িয়ে দানা বের করে রোদে শুকানো হচ্ছে। প্রখর কাটফাটা রোদে ভুট্টা শুকানোর কাজটি করতে গিয়ে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে রফিকুল নিজেও সমানতালে কাজ করছে। মাথা আর কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। তবে দেখে এতটুকুও ক্লান্ত মনে হয়নি তাঁকে বরং সফল হওয়ার হাসির ঝিলিক ঠোঁটেমুখে ভাসছে তাঁর।
রফিকুল জানান, মনে শত শঙ্কা নিয়েই ভুট্টা চাষ শুরু করি। একদিকে ব্যাংক লোন তার উপরও একমাত্র জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন পিয়নের চাকুরিটাও ছেড়ে দিয়েছি। লক্ষ্যপূরন না হলে কি থেকে কি হবে এ নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা কাজ করতো। কিন্তু মনোবল ধরে রেখেছি। রফিকুল আরও জানান, ১৬ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতে গিয়ে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ মাসের মতো। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এসময় পর্যন্ত গড়ে ৬-৭ জন শ্রমিক তাঁর ভুট্টা খেতে কাজ করছে।
তবে একটি আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছেন রফিক । ভুট্টা চাষের শুরু থেকে ভুট্টার দানা ভাংগানো পর্যন্ত স্থানীয় কৃষি অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা কোনোটাই পায়নি সে। উপরন্তু ভুট্টা ভাংগানোর মেশিনটা তারই গ্রামেই এক অকৃষকের কাছে পরে থাকতে দেখেছে সে। কিন্তু আবেদন করেও ভুট্টা ভাঙ্গানোর মেশিনটা রফিকুলের কপালে জুটেনি।
রফিকুলের সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বাক্ষী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বাদাঘাট শাখা ব্যবস্থাপাক এসএম মুনিব খান এ প্রতিবেদককে বলেন, রফিকুল দীর্ঘদিন ধরে বাদাঘাট কৃষি ব্যাংক শাখায় পিয়নের কাজ করতো। একদিন তাঁর স্বপ্নের কথা শুনে চার পার্সেন্ট হারে একটি উদ্যোক্তা লোনের ব্যবস্থা করি। ব্যাংক অবশ্য তাঁর ভুট্টা চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিষয়গুলো ফলোআপ রেখেছে। বর্তমানে গ্রামে ভুট্টা চাষে অন্যদের কাছে অনুকরণীয় এক নাম কৃষক রফিকুল।
তাহিরপুর, ভুট্টা চাষ, রফিকুল, কৃষি ব্যাংক, চাকরি ছেড়ে ভুট্টা চাষ, সফলতার গল্প