সুনামগঞ্জে ১১৭ কোটি টাকার ঘাস চাষ প্রকল্প শুধু কাগজেই সফল
কৃষি
প্রকাশঃ ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০৩ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের কয়েকজন প্রবাসী এবং স্থানীয় কৃষক সরকারি তালিকায় সফল ঘাস চাষী হিসেবে নাম থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে ঘাস চাষ করেননি। স্বাধীন মিয়া এবং সাজু রহমানের মতো প্রবাসীরা দীর্ঘ সময় বিদেশে থাকায় প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুফলও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল হাওরে প্রাণিপুষ্টি নিশ্চিত করা এবং নেপিয়ার, জার্মান ঘাস ও হাইব্রিড ঘাস চাষের মাধ্যমে ঘাস উৎপাদন বৃদ্ধি করা। প্রতিটি উপজেলায় স্থায়ী জার্মপ্লাজম নার্সারি স্থাপন, আধুনিক ঘাস সংরক্ষণ প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, কৃষক পর্যায়ে প্রদর্শনী প্লট এবং সাইলেজের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকৃত বাস্তবতায় হাওরাঞ্চলে কাগজে থাকা সফলতা মাঠে দৃশ্যমান নয়।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত ১০৯ জন কৃষককে ঘাস চাষের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তারা নিজে তা কাজে লাগাচ্ছেন না। কৃষক ও খামারিদের জানান, তারা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, কিন্তু প্রকল্পের সরবরাহকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন না।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চলমান ‘উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প’ ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জসহ দেশের ৪৭৫টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চার বছর আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ একবার বাড়ানো হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৩৯ হাজার ৪৫ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৭৭ হাজার ৫০ একর স্থায়ী ও মওসুমী ঘাস চাষ হয়েছে। তবে প্রকৃত মাঠ পর্যায়ে অধিকাংশ কৃষক ঘাস চাষে অংশ নিচ্ছেন না।
মোহনপুর ইউনিয়নের স্বাধীন মিয়া সাংবাদিকদের জানান, আমি তিন বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে আছি। ঘাস চাষ করিনি। তবে তালিকায় আমার নাম যুক্ত আছে।” একই ইউনিয়নের নরুল্লা গ্রামের আলী নূর বলেন, “আমার গরু-বাছুর আছে, তবে ঘাস চাষ করি না। একদিনের প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং কিছু সামগ্রী পেয়েছি, কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ করিনি।
কাঠইর ইউনিয়নের সাজু রহমান জানান, আমি সৌদি আরব প্রবাসী। ৩-৪ মাস আগে দেশে এসেছি। ঘাস চাষ করি না, তবে তালিকায় নাম যুক্ত আছে।” শাখাইতি গ্রামের কুতুব উদ্দিনও বলেন, “প্রশিক্ষণ পেয়েছি, সামান্য পানি, কাপড় ও একটি বালতি পেয়েছি। ঘাস চাষ করি নি। এখনো চাষের চিন্তা করছি।
সরকারি তালিকায় প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মীরা খামারিদের নাম যুক্ত করেছেন। প্রকল্প কর্মকর্তারা মনে করেন, হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় ১২ মাস ঘাস চাষ করা সম্ভব নয়। এ কারণে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও প্রদর্শনী প্লট থাকলেও কার্যকরভাবে চাষ সম্পন্ন হচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাওর এলাকা অধিকাংশ সময় পানিতে ডুবে থাকে। তাই নিয়মিত ঘাস চাষ করা সম্ভব নয়। তবে যারা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি পেয়েছেন, তারা যেন ঘাস চাষ ও সাইলেজ করতে সক্ষম হন সেদিকে আমরা নজর রাখছি।
প্রকল্প পরিচালক আমজাদ হোসেন ভূইয়া বলেন, হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মওসুমী ঘাস চাষ এবং পরবর্তীতে ঘাস সংরক্ষণ কিভাবে করা যায়, সেই বিষয়টি আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নানা এলাকা ভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে।
ঘাষ চাষ, সুনামগঞ্জ, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, কৃষি