গৌরবদীপ্ত বিজয়ের মাস শুরু
ইতিহাস-ঐতিহ্য
প্রকাশঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ৩:৩২ অপরাহ্ন
সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারপ্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুরগাছগুলো বহুদিন ধরেই ভক্তদের মন টানত। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে লাগানো এসব গাছ শুধু ছায়াই দিত না, মাজারের ইতিহাস আর পরিবেশেরও নীরব অংশ হয়ে ছিল। সম্প্রতি এর মধ্যে পাঁচটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। সামাজিক মাধ্যমেও চলছে সমালোচনা।
মাজার কর্তৃপক্ষ বলছে, মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনেই গাছগুলো সরানো হয়েছে। সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে গাছ কাটার কাজ শেষ হয়। আরও তিনটি খেজুরগাছ সরানোর পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ১৯৮০ সালের দিকে মসজিদের সামনে এসব খেজুরগাছ লাগানো হয়েছিল। রাতে ভক্তদের অনেকেই গাছের নিচে অবস্থান করতেন। নামাজের সময় সেখানে শামিয়ানা ও ত্রিপল টানিয়ে আলাদা জায়গা তৈরি করা হতো। গাছ কেটে ফেলার পর সেই পরিবেশ আর থাকছে না। শুক্রবার ভক্তরা জুম্মার নামাজ পড়তে আসলে এভাবে ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে থাকা গাছগুলো কাটা অবস্থায় দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
৩৬০ আউলিয়া ভক্ত পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, মাজারপ্রাঙ্গণে ঢুকতেই খেজুরগাছগুলো চোখে পড়ত। ‘এগুলো সিলেটের পরিচয়েরই অংশ। এখন অস্থায়ী মসজিদ করলে খোলা মাঠও থাকবে না, ভক্তরাও আগের মতো বসতে পারবে না।’ তাঁর অভিযোগ, মসজিদ কমিটির কয়েকজন সদস্য অতিরিক্ত তৎপরতা দেখানোর কারণেই গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের বৃক্ষপ্রেমি হিসেবে পরিচিত পরিবেশকর্মী শাহ শিকান্দার আহমেদ শাকির বলেন, ‘জায়গা সংকুলান বা মাজারের সৌন্দর্য বাড়ানোর অজুহাতে গাছ কাটা অযৌক্তিক। গাছের চেয়ে সুন্দর কিছু আর নেই। বৃক্ষের সঙ্গে আমাদের যত শত্রুতা তাই কেটে ফেলি অথচ মসজিদের ভেতর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণের মেশিন লাগাই।’
তিনি বলেন, ‘খেজুর গাছের সাথে আমাদের ইসলামী ভাবগার্ম্ভির্যের একটা সম্পৃক্ততা রয়েছে। হঠাৎ করে এই গাছগুলো কাটায় মাজারটি তার সৌন্দর্য্য হারিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’
মাজার মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এম সোহেল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রসঙ্গটি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। পক্ষে–বিপক্ষে মত এসেছে। কিন্তু সম্প্রসারণ করতে গেলে গাছগুলো রাখা সম্ভব নয়।’
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, টিনশেড ঘর নির্মাণের যুক্তিতে বহু পুরোনো খেজুরগাছ কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। এসব গাছ মাজারের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ, তাছাড়া এই গাছগুলো কাটাতে প্রশাসনের বাধা দেয়া উচিত ছিল।
শাহজালাল মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ খান বলেন, মসজিদের সামনের অংশটি খোলা থাকলে সবাই নামাজও পড়তে পারে, হাঁটাবসাও করতে পারে। এলাকা উন্মুক্ত রাখাই ভক্তদের সুবিধা দেবে।
গাছকাটা নিয়ে বিতর্ক বাড়লেও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল। ভক্তদের আশা, মাজারের পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরও সংবেদনশীল হবে।
সিলেট, শাহজালাল মাজার, খেজুরগাছ, কাটা, ভক্ত, দর্শনার্থীদের ক্ষোভ,