শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনে ভোটার হতে হলে সকল ধরনের সেমিস্টার ফি, কোর্স ফি, ক্রেডিট ফি ও অন্যান্য বকেয়া ফি আগামী ছয় দিনের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার সৈয়দ সলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। 


এদিকে, ভোটার হতে হলে ফি প্রদান করতে হবে এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

 

বিশ্ববিদ্যালযয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ সলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদ ও হল ছাত্র সংসদ গঠনতন্ত্র অনুসারে ভোটার হওয়ার যোগ্যতার শর্ত অনুযায়ী আগামী ১৮ নভেম্বর-এর মধ্যে সেমিস্টার ফি, কোর্স ফি, ক্রেডিট ফি ও হল সংক্রান্ত সকল ফিস প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বকেয়াসহ ফিস পরিশোধ করতে হবে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাকিল বলেন, ‘শাকসু ভোটার হতে হলে সব বকেয়া পরিশোধ করতে হবে! এটা কী আদৌ শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হতে পারে।’


তিনি বলেন, ‘আজ মাসের ১২ তারিখ গেলো। আগামী ১৮ তারিখের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এটা কতটা বাস্তবসম্মত? প্রশাসন যেন সবকিছু মগের মুল্লুক বানিয়ে ফেলেছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে কারই বা হাতে টাকা থাকে? ভার্সিটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী টিউশনের টাকায় নিজেদের খরচ চালায়। অনেকে সেই টাকা দিয়ে আবার পরিবারকেও সাহায্য করতে হয়। এখন হুট করে এমন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে কীভাবে বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব? এভাবে চললে হয়তো ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভোটার হতে পারবে না। তাছাড়া ভোটার হতে হলে শিক্ষার্থীদের সব বকেয়া পরিশোধ করতে হবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থী হওয়াই তো যথেষ্ট।’


আইপিই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী শাকসুর ভোটার হওয়ার জন্য তার ভ্যালিড আইডি কার্ড ও বৈধ শিক্ষার্থী হওয়াই যথেষ্ট। ৬ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ফি পরিশোধের নোটিশ দেয়া প্রহসন ছাড়া কিছুই না। সাস্টের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টিউশনের টাকায় নিজের ভরণপোষণ করে আবার অনেক স্টুডেন্ট নিজের পাশাপাশি ফ্যামিলির দায়িত্ব ও বহন করে। মাসের মাঝখানে ৬দিনের মধ্যে ফি বাবদ ৫-৮ হাজার টাকা ম্যানেজ করা অসম্ভব ই বলা যায়।

 

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন শাকসু অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচনে যদি কেবল ভোটার আইডি কার্ড ও বৈধ নাগরিক হওয়ার সুবাধে কেউ ভোটার হতে পারে এবং ভোট দিতে পারে, তবে শাকসুর ক্ষেত্রে এমন হটকারি সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও জুলুম।’


সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ বলেন, ‘শাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষা যতই বাড়তেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেটা বাঞ্চালের আগ্রহ ততই বাড়তেছে। প্রতিনিয়ত অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে, তারা শিক্ষার্থীদের ডিমোটিভেট করতেছে। একবার করেন কমিশন থেকে পদত্যাগ, আবার বলেন এটা ছিল নাকি ভুল বুঝাবুঝি, মানে প্রশাসনের যা তা অবস্থা।’


তিনি আরও বলেন, এখন আবার নতুন প্রহসনমূলক আরেক সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। আগামী আটারো তারিখের মধ্যে নাকি ক্রেডিট ফি, কোর্স ফি, সেমিস্টার ফি এবং হল সংক্রান্ত যাবতীয় ফি পরিশোধ করতে হইবে, অন্যথায় শাকসুতে ভোট দেওয়ার জন্য এলিজেভল হবেনা। প্রশাসনের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কী রাজার ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে নাকি চাষাভুষা‘র ছেলে মেয়েরা।’

 

এদিকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছে। অনেকে ফেসবুকে লিখেছেন ‘সাধু সাবধান, যেকোন চক্রান্তের ব্যাপারে সাস্টিয়ান’রা সদা ঐক্যবদ্ধ। তাই এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং -ফি সমূহের জন্য একটা যৌক্তিক টাইম ফ্রেম দিতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো মানসিক চাপ তৈরী না হয়।’


এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ সলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাঁড়া দেননি। 

 

উল্লেখ্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-শাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষে গত ২৭ শে অক্টোবর ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা খুব শীঘ্রই শাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনার।


শেয়ার করুনঃ

তথ্যপ্রযুক্তি-শিক্ষা থেকে আরো পড়ুন

শাকসু নির্বাচন, শাবিপ্রবি