বানিয়াচংয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির, অপারেশন ক্যাম্পিংয়ের উদ্ভোধন
যাপিতজীবন
প্রকাশঃ ১০ জুন, ২০২৫ ১২:১৫ অপরাহ্ন
ঈদের ছুটিতে সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ও উৎমাছড়ায় পর্যটকদের উপর হামলা, মারধর ও প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে জেলার গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার এই দুটি পর্যটনকেন্দ্রে পৃথকভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
পৃথক দুটি ঘটনারই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
গতকাল সোমবার (৯ জুন) ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন গাড়ি পার্কিং এলাকায় পর্যটকদের উপর ‘স্থানীয়দের’ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগের দিন রোববার (৮ জুন) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র উৎমাছড়া থেকে পর্যটকদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় মাদরাসা ছাত্র ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
পুরো বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এতে সিলেটের পর্যটন শিল্পে বড় ধরণের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে জাফলং পর্যটনকেন্দ্র দিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধপণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন চোরাকারবারিরা। এসময় বিজিবি সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে চোরাইপণ্য একটি দোকানে রেখে পালিয়ে যায় চোরকারবারিরা। পরে বিজিবি সদস্যরা প্রত্যক্ষদর্শী এক পর্যটকের কাছে জানতে চান ওই চোরাকারবারী কোথায় গেছে। এসময় ওই পর্যটক চোরাকারবারিরা যে দোকানে মালামাল রেখেছে সেটি দেখিয়ে দিলে বিজিবি সদস্যরা মালামাল জব্দ করে নিয়ে যান।
পরে বিজিবিকে তথ্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় চোরাকারবারিরা। এসময় বিভিন্ন দোকানের বড় বড় ছাতার হ্যান্ডেল দিয়ে বেধড়কভাবে পেটানো হয় পর্যটকদের।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, লাটি হাতে পর্যটকের মারধর করেছেন কয়েকজন যুবক। একজন যুবক উচ্চস্বরে গালিগালাজ করছেন এবং লাঠি দিয়ে দুই তিনজনকে পেটাচ্ছেন। সময় একজন নারীর চিৎকারও শোনা যাচ্ছিল। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি দ্রুত মিমাংসা করে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছে। পরে স্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। পর্যটকদের খুশি করে দেওয়া হয়েছে। তারা যাওয়ার সময় খুশি হয়ে গেছেন।’
কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের তো অনেক বিষয় আছে। তবে এটা স্পেসিফিক কোনো বিষয় না। ইস্যুটা তেমন বড় কিছু না। এটা মিমাংসা হয়ে গেছে। যাওয়ার সময় তারা (পর্যটক) খুশি মনে গেছে।’
অন্যদিকে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের চরারবাজার এলাকার উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্র ঘুরতে আসা পর্যটকদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। রোববার (৮ জুন) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। পর্যটকদের বাধা দেওয়ার এক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। আপনাদের মতো অনেকেই এখানে এসে মদ্যপান করে অশ্লীল কার্যকলাপ করে, যার ফলে আমাদের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না।’
ভিডিওতে আরো বলতে শোনা যায়, ‘ঈদের আগের দিন উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের উলামায়ে কেরাম মুরুব্বি ও যুব সমাজ সকলে মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে উৎমাছড়া এলাকায় পর্যটনের নামে কেউ আসতে পারবে না।’
এ বিষয়ে ট্যুরিজম ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মোহাম্মদ খতিবুর রহমান বলেন, একটি পর্যটন কেন্দ্র শুধু একটি অঞ্চলকে উন্নত করে না, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে এর প্রভাব খুবই ক্ষতিকর হবে। এটা কোনোভাবেই কাম্য না।
তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তার শঙ্কা রয়েছে। যেটা বারবার প্রমাণিতও হচ্ছে। এটা সিলেটের পর্যটন শিল্পে বড় ধরণের হুমকি। প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সার্বক্ষনিক তদারকি বাড়াতে হবে।
সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের সাথে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনাকে হালকা করে দেখার অবকাশ নেই বলে মনে করেন পরিবেশ ও ঐতিহ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব ভূমিকা রাখা নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম। তিনি বলেন, ‘পর্যটন করপোরেশন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন সিলেটে পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কথা বললেও পর্যটকদের সাথে ঘটে যাওয়া একাধিক ঘটনায় তাঁদের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সিলেট যারা পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত তাঁদের এসব বিষয় নিয়ে সরব হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় এই ব্যবসায় ধস নামবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘জাফলংয়ের ঘটনায় স্থানীয়রা সমাধান করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা পর্যটকদের নাম ঠিকানা সবই রেখেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে, তারা অভিযোগ করলে আমরা আইনগত সকল ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, ‘জাফলংয়ের ওই পর্যটকরা মানিকগঞ্জ থেকে সিলেটে এসেছেন। ঘটনার আগে ওই পর্যটক গ্রুপের ১৫ বছর বয়সী একজন সদস্য বিজিবির সাথে কথা বলছিলেন। এই কথা বলাকে স্থানীয়রা অন্যভাবে নেওয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’ তবে উৎমা ছড়ার বিষয়ে তিনি অবগত নয় বলে জানিয়েছেন।
সিলেট, জাফলং, উৎমাছড়া, পর্যটকদের মারধর