সিলেটের বিয়ানীবাজারে জোরপূর্বক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। বুধবার (২১ মে) দুপুর ১২টার দিকে তিনি নিজেকে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ঘোষণা করেন। 


স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম আলতাফ হোসেন। তিনি ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেনের আপন বড়ভাই। 


অভিযোগ ওঠেছে, ভাইয়ের ক্ষমতা বলেই ইউনিয়ন পরিষদকে নিজের আয়ত্বে নিয়েছেন তিনি। 


ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ মে) দিনভর ইউপি সচিবের কক্ষে ইউপি সদস্যরা যে যার মতো করে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আলতাফ হোসেন ও প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফয়জুল হক নজমুলকে সমর্থন জানান। এতে পাঁচজন সদস্য আলতাফ হোসেনকে এবং চারজন ফয়জুল হক নজমুলকে সমর্থন জানান।  তবে এ বিষয়ে কোন সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। 


এদিকে অপর আরেকজন সদস্য আইনগত বৈধতার কথা উল্লেখ করে ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। এ ধরণের ভোটের আইনগত বৈধতা আছে কিনা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে তাঁর সমর্থন প্রদানের কথা জানান। 


এ অবস্থায় বুধবার (২১ মে) দুপুরে আলতাফ হোসেন জোরপূর্বক বন্ধ কার্যালয় খোলে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে কার্যক্রম শুরু করেন এবং নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ঘোষণা করেন।


পরিষদের সদস্যরা জানান, আলতাফ হোসেনের ভাই বিএনপি নেতা সরোয়ার হোসেন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে ম্যানেজ করে একদিনের মধ্যে বর্তমান পরিষদের সদস্যদের প্রকাশ্যে মতামত দেয়ার আয়োজন করেন। এতে ইউপি সদস্যরা দ্বিমত পোষণ করলে দুইভাই মিলে তাদেরকে মামলা-হামলার ভয়ভীতি দেখান। 


ফয়জুল হক নজমুল, সেলিম উদ্দিন, সৈয়দুর রহমানসহ একাধিক সদস্য জানান, আলতাফ হোসেন সচিবকে দিয়ে মেম্বারদেরকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছেন। তারা সকলেই প্রকাশ্যে মতামত দেয়ার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানানোর পর তিনি 'দিতে হবে' উল্লেখ করে জোর দাবি করেন।


ইউপি সচিব মো. তাজ উদ্দিন হুমকি-ধামকির বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, মঙ্গলবার  গিয়ে অফিসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাইনি। তবে আজ সকালে  ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন এসে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উনাকে আর্থিক বিষয় ছাড়া ইউনিয়নের জনবান্ধন বিষয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে উপজেলা থেকে ইউপি সচিব কোন নির্দেশনা পাননি বলে জানান।


জোর করে চেয়ারম্যানের কার্যালয় খোলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি


বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না বলেন, 'মাথিউরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কে হবে না হবে সেটি নির্ধারণ করবেন সিলেটের জেলা প্রশাসক। আলতাফ হোসেন মেম্বার চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসলে সেটি আইনগতভাবে অবৈধ। কেউ অভিযোগ করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।'


তিনি বলেন, 'প্যানেল চেয়ারম্যানদের মধ্যে একজনের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'


সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, 'বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নিয়ে আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করব।'


এর আগে ১৯ মে স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হওয়ায় সিলেটের জেলা প্রশাসক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ক্ষমতা প্রদান করবেন। 




শেয়ার করুনঃ

অপরাধ-বিচার থেকে আরো পড়ুন

রাজনীতি, দখল, চেয়ারম্যান, বিয়ানীবাজার