ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতে প্রভাব পড়েছে সিলেটের জনজীবনেও। প্রতিবেশী দেশের এমন উত্তেজনার খবরে সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে সিলেটের মানুষের মধ্যে অনেকটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দিনভর বিষয়টি ছিল ‘টক অব দ্য টাউন।’ 


ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে সিলেটে কোনো প্রভাব পরার সম্ভাবনা না থাকলেও সিলেটের চার জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি।) 


মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে ভারতের 'অপারেশন সিঁদুুর' আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি স্থানে মিসাইল হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সিলেটের হোটেল, রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান, অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। দিনভর বিষয়টি ছিল টক অব দ্য টাউন। 


ভারতের দাবি, এই হামলা ২২ এপ্রিল পাহালগামে ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে। পাকিস্তান এই হামলাকে 'যুদ্ধের ঘোষণা' হিসেবে অভিহিত করে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, 'ভারতের এই হামলা কাপুরুষোচিত এবং এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।'


সিলেটের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, ক্বীন ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় চায়ের দোকানগুলোতে ছিল ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে আলোচনা। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চলছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, কাশ্মীর ইস্যু এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা। কেউ বলছেন, 'ভারত সঠিক কাজ করেছে, আবার কেউ বলছেন, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।'


আম্বরখানা এলাকায় চা খেতে আসা ব‍্যাংক কর্মী তপু সরকার বলেন, 'ভারত পাকিস্তানে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার জন‍্য দায়ী পাকিস্তান নিজেই। তারা ভারতে ২৬ জন ঘুরতে যাওয়া পর্যটককে হত‍্যা করেছে, সেটিরই জবাব ভারত দিচ্ছে। তবে এই যুদ্ধ আমাদের দেশের জন‍্য ভালো বার্তা নিয়ে আসবে না তাই আমরা জনগণরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই।' 


এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ‍্যমে সোচ্চার। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট, মিমের মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করছেন।


মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ বলেন, 'আমরা ৯০ দশকের শেষের দিকে জন্ম নেয়া ছেলে মেয়েরা ভাগ‍্যবান, করোনাভাইরাস মহামারি, ১৫ বছরেরর স্বৈরাচারের পতন এখন আবার ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ দেখতেছি। তবে দিন শেষে এই ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই, যুদ্ধ কোন দেশের জন‍্যই ভালো বার্তা নিয়ে আসবে না। দক্ষিণ এশিয়া শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত, এই সৌন্দর্য‍্য ধরে রাখতে হবে।'    


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সিলেটবাসীর প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ার মতো। অনেকে ভারতের অভিযানের ভিডিও ও সংবাদ লিংক শেয়ার করছেন, কেউ পোস্ট করছেন মিম বা তুলনামূলক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। 


ব‍্যবসায়ী ও এক্টিভিস্ট রুবেল আহমদ কুয়াশা তার ফেসবুকে ট্রল হিসেবে লিখেন, 'পাকিস্তান এমন এক পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে যেটা মারলে পুরা ভারত ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু মাঝখানে থাকা বাংলাদেশ বেঁচে যাবে।'  


সাংবাদিক নূর আহমেদ ফেসবুকে লিখেন, 'এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ হোক। যুদ্ধ কোন কল‍্যাণ বয়ে আনবে না।' 


কলামিস্ট কবির য়াহমদ লিখেছেন, 'আমরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে। আর যদি তীব্র যুদ্ধ বেঁধে যায়, তবে ভারতের সামনে কয়দিন টিকতে পারবে পাকিস্তান? আর যুদ্ধ হলে অনেক সাধারণ মানুষ মারা যাবে, ঘটবে মানবিক বিপর্যয়।'


সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান বলেন, আইজিপি মহোদয়ের নির্দেশনা দেয়ার পর আমরা সিলেট রেঞ্জের সকল পুলিশ সুপারকে সীমান্তে কড়া সতর্কবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। সীমান্তে যেনো কারো অনুপ্রবেশ না ঘটে এবং কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন‍্য আমরা চার পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দিয়েছি। 


শেয়ার করুনঃ

সংগ্রাম-স্বাধীনতা থেকে আরো পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান, সংঘাত, উদ্বেগ, সিলেট, সীমান্ত, টক অব দ্য টাউন