মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে পাহাড়ে বসবাসরত খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। এতে খাসিয়া পুঞ্জিসহ স্থানীয় গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, উপজেলা হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার কুলাউড়া হাসপাতালে ৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও ভর্তি হয়েছেন। এর আগে মোট ৩০ জন রোগী শনাক্ত হলে ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে স্থানান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ‘ডেঙ্গু কর্নার’ খোলা হয়েছে।

উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার মিশন বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক ডেভিড পাহান জানান, গত দুই-তিন মাসে ১২০ জন রোগী মিশন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে সেখানে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

কর্মধা ইউনিয়নের প্রায় ১৫-২০টি খাসিয়া পুঞ্জি ও কিছু গ্রামে দেড় মাস ধরে প্রায় তিন শতাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কুলাউড়ার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে উপজেলা হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাজার মিশন হাসপাতালের পাশাপাশি রবিরবাজারে স্থানীয় চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম সোহাগ ও ফরিদ আহমদের চেম্বারেও যথাক্রমে ২০ ও ২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানা গেছে, কর্মধা ইউনিয়নের বিভিন্ন পুঞ্জিতে আক্রান্তদের সংখ্যা: কুকিজুড়ি ৫০ জন, ডলুছড়া ৭০ জন, লবনছড়া ৬০ জন, নুনছড়া ৫০ জন এবং কুকিবাড়ি পুঞ্জিতে ১০ জন। এছাড়া পাহাড়ি পুঞ্জে কাজ করা শ্রমিকরাও আক্রান্ত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব ফটিগুলির সুমন মিয়া, ফটিগুলির কামাল মিয়া এবং নুনা টিল্লার রফিক মিয়া কুলাউড়া হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিলভেস্টার পাটাং বলেন, “গত চার সপ্তাহ আগে আমার ছোটভাই জেরবাস ও পাশ্ববর্তী লুথিজুড়ি পুঞ্জির বাসিন্দা তিতুশ জিব্রা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।”

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন জানান, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আক্রান্তদের বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন জানান, “ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধি ও আক্রান্তের সংখ্যা কমানোর জন্য ১৫ নভেম্বর কর্মধা ইউনিয়নে ৩০০ শতাধিক মশারি বিতরণ করা হয়েছে। কুলাউড়া পৌরসভা শহরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।”

তবে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকা এবং তথ্য লুকোচুরি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মামুনুর রহমান জানান, তার কাছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বিস্তারিত তথ্য নেই এবং পরিসংখ্যানবিদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

পরিসংখ্যানবিদ এটিএম আনোয়ার গাজী জানিয়েছেন, সরকারিভাবে মৌলভীবাজারে ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে কুলাউড়া ১৬, শ্রীমঙ্গল ১ এবং সদর উপজেলায় ২৪ জন। তবে বেসরকারিভাবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।


শেয়ার করুনঃ

যাপিতজীবন থেকে আরো পড়ুন

সিলেট, মৌলভীবাজার, কুলাউড়া. ডেঙ্গু