মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় 'আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও পরিবেশের উপর সামাজিক বনায়নের প্রভাব' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) বিকেল ৪টায় উপজেলার লক্ষ্মীপুর মিশনে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রাকৃতিক বন ধ্বংস ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করেন বক্তারা।

বিগত সরকারের সময়ে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে আদিবাসী জনগোষ্ঠী উচ্ছেদের যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে—এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বক্তারা।

আলোচনা সভায় আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রত্যুষ আসাক্রার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-র সদস্য সচিব শরীফ জামিল। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, সিলেট হচ্ছে বৈচিত্র্যময় নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ এলাকা। ভুলভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কারণে ইতিমধ্যে অনেক পুঞ্জির জীবনযাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থেই আদিবাসীদের সুরক্ষা করতে হবে।  

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রত্যুষ আসাক্রা বলেন, সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের পুনঃমূল্যায়ন হওয়া উচিত। যে সমস্ত এলাকায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে, সে সমস্ত এলাকায় যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে স্থানীয় মানুষের অভিমত গ্রহণ ও অর্থবহ প্রতিফলনকে নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ও পদ্ধতিগত সংস্কার প্রয়োজন। 

ধরা কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ফাদার জোসেফ গোমেজ বলেন, সামাজিক বনায়ন প্রকল্প আদিবাসী খাসিয়াদের জন্য হুমকি স্বরূপ। তিনি এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান। 

ধরা সিলেটের আহ্বায়ক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী (বাহার) বলেন, আদিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত লড়াইয়ের সাথে আমরা কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করবো। ন্যায্য দাবি আদায়ে আমাদের অতীতের মত ভবিষ্যতেও লড়াই করে যেতে হবে। 

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য আদিবাসী নেত্রী বাবলী তালাং বলেন, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে অতীতে সামাজিক বনায়ন হয়েছে। সামাজিক বনায়নের নামে অতীতে খাসিয়াদের পান জুম দখল হয়েছে। তিনি দখলকৃত পান জুমের জায়গা খাসিয়াদের ফিরিয়ে দিতে বলেন। 

ধরা সিলেটের সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম বলেন, বোনকে বনের মত প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি  পাওয়ার সুযোগ দিলেই বন করে ওঠে। কিন্তু সামাজিক বনায়নের নামে বন বিভাগ প্রকল্প গ্রহণ করে বনের সর্বনাশ করেছে। 

তোফাজ্জল বলেন, প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন কোনক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়।  সামাজিক বনায়নের নামে এমনকিছু গাছ লাগানো হয়েছিল যা উপযুক্ত নয়। এই সমস্ত গাছ কেটে সাফ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রত্যুষ আসাক্রা বলেন, বনায়ন করার কিছু নেই। বনকে ধ্বংস না করলেই বন বেঁচে থাকতো কিন্তু বন বিনাশ করে সামাজিক বনায়ন হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কিছু না হওয়ার প্রত্যাশা।

মেঘাটিলা খাসিয়া পুন্জির মন্ত্রী মনিকা খংলার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ধরা সিলেটের সদস্য সচিব আব্দুল করিম কিম, হাওর রক্ষায় আমরা ( ধরা) সমন্বয়ক তোফাজ্জল সোহেল, ফাদার ভ্যালেন্টাইন তালাং, কুবরাজ  সংগঠনের উপদেষ্টা পাস্টর পাইরিন সুটিং, আগার পুঞ্জির মন্ত্রী সুখময় আমসে, বড়লেখা ৫ নং পঞ্জির মন্ত্রী কেনেডি সুমের, ৭ নং পুঞ্জিবাসী ইলিয়াস বারে, নার্সারি পুঞ্জির প্রবাস মৃং প্রমুখা


শেয়ার করুনঃ

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে আরো পড়ুন

কুলাউড়া সামাজিক বনায়ন, আদিবাসী বন রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার আদিবাসী খবর, খাসিয়া পুঞ্জি বন সংরক্ষণ