তিন কারণে এবার চামড়া নিয়ে আগ্রহ নেই সিলেটের ব্যবসায়ীদের
ব্যবসা-বাণিজ্য
প্রকাশঃ ০৩ জুন ২০২৫
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে । কেউ কেউ বাজেটে পুঁজিবাজার ও উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে কর হার হ্রাসকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই নতুন কর আরোপ ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে সিলেটের বেশ কয়কজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে সিলেট ভয়েস। বাজেটে দেশীয় ডায়াপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, তরল দুধ, কম্পিউটার মনিটর, হাসপাতালের সরঞ্জামসহ কিছু পণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে।
একই সাথে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর হারে ছাড়, ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর কমানো এবং রিসাইক্লিং ও বিদ্যুৎ খাতে উৎসে কর হ্রাসকে ব্যবসায়ীরা ভালো দিক হিসেবে দেখছেন।
তবে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিকে সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশাজনক বলে মনে করছেন তারা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ফয়েজ হাসান ফেরদৌস বলেন, 'যদিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, এটি ভালো। তবে বিগত ১৫ বছরের অনেক ভূয়া কোম্পানী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যারা এক বছরেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে লোকসান দেখিয়ে টাকা লুটে নিয়েছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া পণ্যের ওপর নতুন কর চাপানোয় ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।
ফয়েজ হাসান আরও বলেন, প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিক ও সৌন্দর্য সামগ্রীসহ অনেক পণ্যের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। যেগুলো আমাদের অঞ্চলে ব্যাপকহারে বিক্রি হয়। যার ফলে ভোক্তা বিক্রেতা সবাই বিপদে পড়বে।
নগরীর আম্বরখানা এলাকার ইলেকট্রনিক পণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, `দেশি মোবাইল ফোন, ওয়াশিং মেশিন, মিক্সার, এলইডি লাইট এসব পণ্যের দাম বাড়বে, ফলে বিক্রি কমে যাবে। এর প্রভাব সরাসরি ভোক্তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ওপর পড়বে।’
সিলেটের তরুণ উদ্যোক্তা ও অনলাইনে অর্পাস নামীয় বেতের ফার্নিচার ব্যবসায়ী রিপন ঘোষ সিলেট ভয়েসকে বলেন, আমি প্রায় ৫ বছর যাবৎ দারাজসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্লাটফর্মের মাধ্যমে বেতের ফার্ণিচার বিক্রি করি। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ধরণের চার্জ ও কমিশন বৃদ্ধিতে এমনিতেই এই ধরণের মার্কেটপ্লেসে কাজ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। বাজেটে কমিশন চার্জ বৃদ্ধির ফলে আগামী দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, একজন ক্ষুদ্র উদ্যেক্তা হিসেবে আমাদের পথচলা বাঁধাপ্রাপ্ত হবে। একইসাথে ক্রেতারাও ভীষণভাবে চাপে পড়বেন। দেশের ক্রমবিকাশমান ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির গতি হ্রাস পাবে যা দেশের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি সিলেট জেলা শাখার পরিচালক মুবিন আহমদ বলেন, 'ওষুধের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশে কর কমানো হলে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে, যার প্রভাব পড়বে খুচরা পর্যায়ে। এখন নিত্যদিনেই ওষুধের দাম বাড়তেছে যা ব্যবসায়ী এবং গ্রাহক দুজনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো এখন যেহেতু দাম কমেছে তাই আশা করা যায় এখন ভোগান্তি কিছুটা কমবে।’
সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম মুনিম বলেন, 'প্রতিবারই বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। যা সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশাজনক। কিন্তু অন্যদিকে এটা লাভজনক অনেক ব্যবসায়ী রাজস্ব না দেয়ার জন্য টাকা গোপন করেন অথবা ব্যবসায় লোকসান দেখান তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে পতিত সরকারের ব্যবসায়ীরা যেনো তাদের কালো টাকা সাদা করতে না পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬, বাজেট, অন্তর্বর্তী সরকার, বাজেট ঘোষণা, ৫৪ তম বাজেট ঘোষণা