ছবিঃ মশা নিধনে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছড়াচ্ছেন সিসিকের কর্মী। নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘরের ভেতরেও মিলছে না স্বস্তি। অথচ মশা কমাতে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো কিছুই নেই। ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছড়ানো ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের। 


চলতি অর্থ বছরে মশা নিধনে ২ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। গত অর্থবছরেও সমপরিমাণ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এতো ব্যয়ের পরও সেই একই অবস্থা। মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ট নগরে বসবাসকারী মানুষ। 


এদিকে, মশার উপদ্রব বাড়া ছাড়াও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। সিলেটে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই মৃত্যুও। চলতি বছরে সিলেটে ডেঙ্গুতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য সিসিকের দাবি, ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে নগরীর বাসিন্দা কম। বেশিরভাগ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার। 


জানা গেছে, মশক নিধনে সিসিকের স্থায়ী কোনো কর্মী নেই। প্রতিবছর দৈনিক মুজুরির ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক কর্মীকে দিয়ে  মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করানো হয়। 


সিসিক জানায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে মশা দমনে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার ৪ হাজার লিটার লার্ভিসাইড (টেমেপস ৫০ ইসি) এবং ২৫ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড (ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি) ক্রয় করা হয়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সমপরিমাণ ওষুধ ক্রয় করেছিল সিসিক।


বছরে কোটি কোটি টাকার ওষুধ ক্রয় করলেও সে তুলনায় সেবা মিলছে না। যদিও সিসিক বলছে, ৩০-৪০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। কিন্তু বাস্তবে বছরে এক-দুইবার এসব কর্মীদের নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যায়। 


নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে এক কোনায় কংক্রিটের উপর বসে গল্প করছিলেন কলেজছাত্র সুমন শাওন। বসা অবস্থায় অসংখ্যবার হাত-পা নাড়াছাড়া করছিলেন তিনি। কথা হলে তিনি জানান, বিকেল বেলাও বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্পও করা যায় না। মশা এমন কামড়ায় যে দাঁড়িয়ে থাকাও দায় হয়ে পড়ে। 

 
তিনি বলেন, ‘প্রায় আধাঘণ্টা হলো বন্ধদের সঙ্গে মিনারে এসেছি কিন্তু মশার তাণ্ডবে না পারছি দাঁড়িয়ে থাকতে, না পারছি বসে গল্প করতে।’ কিছুক্ষণ পর একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই স্থান ত্যাগ করেন তিনি। 


তিনি বলেন, ‘যে হারে মশার উপদ্রব বাড়ছে, খুব দ্রুত ড্রেন, নালায় সিসিকের কীটনাশক ব্যবহার করা জরুরী।’


১৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অপু বলেন, ‘এমনিতেই চারিদিকে জ্বর-সর্দি ছড়িয়ে পড়ছে। কোনটা ডেঙ্গু আর কোনটা সাধারণ জ্বর তা বোঝা যাচ্ছে না। এতে আতঙ্ক বাড়ছে।’


তিনি বলেন, ‘মশার কামড়ে শরীরের হাত-পায়ের বিভিন্ন স্থানে এলার্জি জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যা রোগ-বালাই বৃদ্ধি করছে। মাঝেমাঝে সিটি করপোরেশনের লোকেরা এসে ড্রেন, খোলা জায়গা ও বাসার আঙিনায় ধোঁয়ার স্প্রে করে যান। এতে সাময়িকভাবে মশার আক্রমণ থেকে কিছুটা রেহাই মিলেলেও স্থায়ী কোনো সুফল মিলছে না।’


সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘নগরীতে মশা নিধনের জন্য প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ জন মশক নিধনকর্মী ও ৭ জন সুপারভাইজার দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন, যা যথেষ্ট নয়। ওয়ার্ডভিত্তিক কমপক্ষে ৪-৫ জন কর্মী ও সুপারভাইজার নিয়োগ দিতে হবে। এ হিসেবে সিলেট নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডে অন্তত দুইশতাধিক কর্মী প্রয়োজন। এসব কর্মীদের বেতন-ভাতা সিসিকের পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়। তাই আর্থিক সংকটের কারণে স্থায়ীভাবে কোনো কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’


সিলেট ভয়েসকে তিনি বলেন, ২০২১ সাল থেকে কর্মী নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছি কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মশা নিধনের জন্য নগরীতে বছরে ২-৩ বার বিভিন্ন স্থানে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। নিয়ম হচ্ছে প্রতিমাসে কীটনাশক ব্যবহার করা। তাই বাস্তবিকভাবে স্থায়ী সুফল পাওয়া সম্ভব হয় না। তবে সাময়িকভাবে একটি সুফল পাওয়া যায় ও নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পান। সীমিত সামর্থ থেক সিসিক যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।


ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নগরবাসী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন না করবেন এবং সচেতন না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। নগরবাসী সচেতন হলে ও নগরকে আবর্জনামুক্ত রাখতে পারলে বছরে এক দুইবার অভিযানই যথেষ্ট। অতিরিক্ত ঔষধ ক্রয় করে পরিকল্পনামত কাজ করতে না পারলে এটি অপচয় হবে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এবং পরিষ্কার থাকতে হবে।’


শেয়ার করুনঃ

দৈনন্দিন থেকে আরো পড়ুন

সিলেট মশা নিধন, সিসিক মশার উপদ্রব, সিলেটে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান, সিলেট সিটি করপোরেশন