
বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে খ্যাত হবিগঞ্জের বানিয়াচং আজ যেন যোগাযোগ সংকটে অবরুদ্ধ। প্রতিদিন হাজারো মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসার প্রয়োজনে সিলেটে যাতায়াত করলেও সরাসরি সরকারি বাস সার্ভিস না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলাবাসীর।
স্থানীওদের অভিযোগ, সিলেট পৌঁছাতে তাদের কয়েক দফায় বাহন পরিবর্তন করতে হয়। প্রথমে মিশুক বা টমটমে গ্যানিংগঞ্জ, সেখান থেকে সিএনজি বা মাইক্রোতে নবীগঞ্জ হয়ে আউশকান্দি, তারপর আবার অন্য বাহনে সিলেট পৌঁছাতে হয়। এতে ভাড়া যেমন বেড়েছে, সময়ও নষ্ট হচ্ছে দ্বিগুণ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিদিন শুধু ভাড়ার টাকাতেই পড়াশোনার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
কলেজ পড়ুয়া তানভীর আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরাসরি সরকারি বাস থাকলে যাতায়াত খরচ অর্ধেক কমে যেত। আমরা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু প্রতিদিন শুধু ভাড়ার পেছনে এত টাকা চলে যায় যে, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অভিভাবক নাসির উদ্দিন জানান, ‘তার ছেলেকে প্রতিদিন সিলেটের কোচিং ক্লাসে পাঠাতে গিয়ে মাসে কয়েক হাজার টাকা শুধু ভাড়ার পেছনে খরচ হয়। ‘আমরা কৃষক মানুষ, এত খরচ বহন করা কষ্টকর। সরকারি বাস না থাকায় আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।’
মিয়াখানি শায়খ আবু নছর কোরাইশি দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিবুর রহমান মিটু বলেন, ‘বড়বাজার সিএনজি স্টেশন থেকে যদি বিআরটিসি বাস চালু হয়, তবে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উভয় এলাকার মানুষই উপকৃত হবেন। বর্তমানে শিক্ষার্থী ও ইমারজেন্সী রোগীসহ অন্যান্য যাত্রীদের একাধিকবার বাহন পরিবর্তন করে সিলেটে যেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাধ্য।’
শুধু এতেই শেষ নয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় বানিয়াচংয়ের মানুষদের। গুরুতর অসুস্থ রোগী বা গর্ভবতী নারীদের সিলেট ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালে নিতে গেলে আগে ভাড়া জোগাড়েই সময় চলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছানোর কারণে রোগীকে হারানোর ঘটনাও ঘটে।
হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রোগীদের সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। সরাসরি বিআরটিসি বাস থাকলে অন্তত জরুরি রোগী পরিবহনে গতি আসত।’
এদিকে ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন সমস্যায়। পণ্য সিলেটে নিয়ে যেতে একাধিকবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়, ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে লাভের পরিমাণ থাকে নামমাত্র।
শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলের দাবি, উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো সহজ যোগাযোগ। বানিয়াচং–সিলেট রুটে সরাসরি বিআরটিসি বাস চালু হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
বানিয়াচংবাসীর ভাষায়—এটি কেবল একটি বাসের দাবি নয়, এটি তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িত অধিকার। তাদের প্রত্যাশা, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সরকারি বাস চালু হলে অবসান ঘটবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির।
শেয়ার করুনঃ
দৈনন্দিন থেকে আরো পড়ুন
বানিয়াচং, বাস চালুর দাবি, সিলেট-বানিয়াচং, বাস সার্ভিস, দুর্ভোগ, নাগরিক দুর্ভোগ


