নদীর পাড়ে ময়লার স্তুপ: ঝুঁকিতে জলজ জীবন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ
প্রকাশঃ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:০০ অপরাহ্ন
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না থাকায় সুনামগঞ্জের শতাধিক হাওরে তৈরি হয়েছে পানি সংকট। পানির স্বল্পতায় ব্যাহত হয়েছে মাছের প্রজনন। এর ফলে হাওর, নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে আশানুরূপ মাছ ধরা যাচ্ছে না। ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে মাছ না পড়ায় দুঃসময়ের মুখে পড়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ।
হাওর অঞ্চলের এই দুর্দিনের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রজনন মৌসুমে অবাধে মা ও পোনা মাছ ধরা, শুষ্ক মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে মাছ আহরণ এবং কীটনাশকের প্রভাবে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে।
মৎস্যনির্ভর জেলে সম্প্রদায়ের জীবিকা হুমকির মুখে পড়লেও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কিংবা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সরকার।
সম্প্রতি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ের রায়পুর ও বাহাদুরপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, দুই গ্রামের প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবার মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এবার সময়মতো পানি না আসায় মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি। ফলে মৌসুমে মাছ ধরা যাচ্ছে না। এতে দুঃসময়ে পড়েছেন জেলে পরিবারগুলো।
রায়পুর গ্রামের জেলে মিনন্দ্র দাস বলেন, এবার হাওরে পানি আসেনি ঠিক সময়ে। পানি না থাকায় মাছও হয়নি। সারাদিন জাল ফেলেও আশানুরূপ মাছ পাই না। খুব কষ্টে চলছে দিন।”
আরেক জেলে রথিন্দ্র দাসের অভিযোগ, আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেকে মাছ ধরা ছেড়ে দিয়েছে। কেউ কেউ ঢাকায় চলে গেছে। আমরাও টিকে থাকতে পারছি না।
স্থানীয়দের ভাষ্য, শুধু এ বছরেই অন্তত ১৫টি পরিবার মাছ ধরা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকায় চলে গেছে।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় জেলের সংখ্যা একসময় ছিল এক লাখ এক হাজার। জীবিকা পরিবর্তনের কারণে দিন দিন এই সংখ্যা কমে আসছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, “এবার বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে মাছের প্রজননের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সময়মতো প্রজনন না হওয়ায় মাছের উৎপাদন কমেছে। ফলে জেলেরা পেশা বদলাচ্ছেন।”
পরিবেশ কর্মী সালেহিন চৌধুরী শুভ মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে হাওরাঞ্চলের পরিবেশ, জলজ উদ্ভিদ ও মাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে জেলেদের জীবিকায়ও। তিনি সরকারের কাছে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বরাদ্দ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের পুনর্বাসন ও সহায়তার দাবি জানান।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “হাওরে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও মানুষের নানা কার্যক্রম দায়ী। জলাধারের সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। আমরা প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ রাখা, জলাশয় খনন, অভয়াশ্রম তৈরি এবং জেলেদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।”