অনুমতি ছাড়া শাহ আবদুল করিমের গান ব্যবহার, গ্রামীণফোনের নিকট ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি
প্রকাশঃ ১৮ জুন ২০২৫
দীর্ঘ ৪৪ বছরেও নিজস্ব ঠিকানায় যেতে পারেনি সিলেট শিশু একাডেমি। নিজস্ব ভবন না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে একাডেমির কার্যক্রম। ২০১৩ সালে নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় শিল্পকলা একাডেমির পাশের ৫০ শতক জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলেও একটি মাত্র সাইনবোর্ড ছাড়া শিশু একাডেমির কোনো চিহ্নই নেই।
বর্তমানে নগরীর রিকাবীবাজারে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের দোতলায় চারটি কক্ষে একাডেমির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দার মেঝেতেই বসে শিশুরা সংস্কৃতি চর্চায় অংশ নিচ্ছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিশুদের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রের এই দুরবস্থাকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন অভিভাবক ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা। শিশুদের মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বিকাশের লক্ষ্যে শিশু একাডেমিকে দ্রুত নিজস্ব ঠিকানায় নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান তিারা।
১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আগ্রহে শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বিকাশের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে সিলেটেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ভবন পায়নি।
একাডেমি সূত্র জানায়, বর্তমানে এখানে ১৮ জন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রায় ১২০০ অধিক শিশু বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের চারটি কক্ষে এর কার্যক্রম চলছে। নির্ধারিত চারটি কক্ষ জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা, গ্রন্থাগার, অফিস ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে শিশুদের পাঠদান চলে করিডোর বা বারান্দায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিশুদের চিৎকার ও হইচইয়ের মধ্য দিয়ে চলে কার্যক্রম। এতে প্রশিক্ষকরাও বিব্রত হন।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শিশুদের জন্য বরাদ্দ করা একমাত্র শৌচাগার উপযোগী নয়। দুর্গন্ধের কারণে শিশু ও অভিভাবকরা বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাছাড়াও গ্রন্থাগারের জায়গা সংকুচিত হওয়ায় অনেক বই পড়ে আছে গুদামে।
জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালে সিলেট নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকায় সিলেট বিভাগীয় শিশু একাডেমি কমপ্লেক্সের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ৫০ শতক জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ছেলে নিয়ে প্রশিক্ষণে আসা অঞ্জন দাস বলেন, সিলেটের মতো বিভাগীয় শহরে শিশু একাডেমির নিজস্ব ভবন না থাকাটা খুবই কষ্টের। এখানে অনেক কষ্টে ছেলে মেয়েদের এক করিডোরে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। এখানে শত শত শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নেয়। সেজন্য তাদের নিজস্ব ভবন থাকা জরুরি। সরকারের উচিত এ বিষয়ে নজর দেয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশু একাডেমির এক প্রশিক্ষক বলেন, ‘২০১৩ সালে পূর্ব শাহী ঈদগাহের জেলা শিল্পকলা একাডেমির পাশেই সিলেট শিশু একাডেমি করার কথা ছিল। জায়গাও দেয়া হয়েছিল ৫০ শতক। কিন্তু বিগত সময়ে মন্ত্রনালয় এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বার বার বলার পরেও অদৃশ্য কারণে ভবণ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যার কারণে প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরেও অস্থায়ী ভবনেই আমাদের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এখানে প্রশিক্ষণ দেয়া অনেক কষ্টসাধ্য।‘
শিশুদের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংগঠন খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিধান চন্দ্র দেব বলেন, ‘সিলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে শিশু একাডেমির নিজস্ব ভবন এখনো হয়নি, এটি দুঃখজনক। সরকার চাইলেই এ দিকে দ্রুত নজর দিতে পারে। তাদের যদি সদিচ্ছা হয় তাহলে সিলেটের শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বিকাশের দিকটা অগ্রসর হবে।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঞা সিলেট ভয়েসকে বলেন, বিষয়টা এমন হয়ে গিয়েছে, আমরা দুই ধাপ এগুতে গেলে কিন্তু তিন হাত পিছিয়ে যাই। অনেকবার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানালেও তারা কোন উদ্যোগি নেননি। মন্ত্রী এমপি সচিব সবার কাছেই গিয়েছি কিন্তু কোন কাজে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, তবে আশা খবর হচ্ছে নিজস্ব ভবনের কাজ শুরু হওয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এটির মাধ্যমে সিলেটনসহ ১৭ টি শিশু একাডেমির ভবন নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে সিলেটে আমাদের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জায়গার ডিজিটাল সার্ভে শেষ হয়েছে। আশা করি দ্রতই কাজ শুরু হবে।
সিলেট শিশু একাডেমি, শিশু একাডেমির ভবন সংকট, সিলেট শিশুদের সংস্কৃতি চর্চা, শিশু প্রশিক্ষণ সিলেট