জগন্নাথপুরে সরকারি ঘর পেয়েও থাকেন না অনেকে
অনুসন্ধান
অধিকাংশ ভবনের নকশা ও রঙ পাল্টে পুনরায় ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ভবন মালিকরা
প্রকাশঃ ০৩ জুলাই ২০২৫
ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ২০১৯ সালে নগরীর ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ‘ দেখিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। তালিকায় থাকা চারটি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুইটি ভবনকে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সংস্কার করা হয়।
এরপর দীর্ঘ ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি ১৮টি স্থাপনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিসিক। এসব স্থাপনার মধ্যে বাসাবাড়ি, বিদ্যালয় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। নগর প্রশাসনের এমন দুর্বলতাকে পুঁজি করে উল্টো খোলস পাল্টে ফেলা হয়েছে এসব স্থাপনার। চোখ ধাধানো রঙ দিয়ে পুরোনো জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে।
এতে করে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এসব স্থাপনায় বসবাস করছেন মানুষজন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকিতে। এই অবস্থায় নির্বিকার সিসিক। অনেকটা ভুলেই গেছে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই তালিকার কথা।
ভূতাত্ত্বিক অবস্থান ও ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল হিসেবে সিলেট প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘সিলেট অঞ্চল যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। এতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে পুরো নগরী। এখনই সকলকে সচেতন হতে হবে, নয়তোবা মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অন্তত ৭টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলই ছিল সিলেট বিভাগের, গোলাপগঞ্জ, জগন্নাথপুর, মাইঝবাগ ও নবীগঞ্জে। রিখটার স্কেলে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫, ৩ দশমিক ৫, ৩ দশমিক ৪, ৩ দশমিক ৪, ২ দশমিক ৮, ৩ দশমিক ৫ ও ২ দশমিক ৮।
এছাড়াও গেল দুই বছরে সিলেট ও এর পার্শবর্তী অঞ্চলে প্রায় দেড় শতাধিকের চেয়ে বেশি ভুমিকম্প অনুভুত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেটের আবহাওয়া অফিস।
এ অবস্থায় ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট অঞ্চল। বিশেষ করে সিলেট নগরী। প্রতিনিয়ত নগরে গড়ে ওঠছে অসংখ্য বহুতল ভবন। এসব ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সক্ষমতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নগরীর ২৪টি ভবনকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে সিসিক। তালিকায় থাকা চারটি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুইটি ভবনকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পুনঃসংস্কার করা হয়। কিন্তু ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি ১৮টি ভবনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিসিক।
সিসিকের তালিকানুযায়ী, নগরীর ঝুঁকিপূর্ন ভবনগুলো হলো-কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দর বাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেইটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন।
যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেন এলাকার ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ী এলাকার ওয়ারিছ মঞ্জিল একতা- ৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতা- ৩৭৭/৮ ও শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতা- ৩৭৭/৯, বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী-১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিনপাড়ের পৌর বিপনী ও পৌর শপিং সেন্টার, এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি- প্রভাতী, শ্রীধরা হাউস ।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সিলেটে যেকোনো সময় ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখী হতে পারে পুরো নগরী। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে এখনই সতর্ক না হলে ভয়াবহ পরিণতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মুশতাক আহমেদ সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘বর্তমানে সিলেটের অধিকাংশ স্থাপনাই উচ্চ মাত্রার ভূ-কম্পন সহ্য করতে সক্ষম নয়। সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই পুরনো ও দুর্বল, যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট শহরে গড়ে উঠা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন নির্মাণে যথাযথ বিধিমালা মানা হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলে বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।'
প্রফেসর মুশতাক বলেন, 'পুরোপুরিভাবে ভূমিকম্প মোকাবেলা সম্ভব না করা গেলেও, আগে থেকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন এবং পদক্ষেপ নিলে এর তীব্র ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছুটা বাঁচা যাবে।' এজন্য সকলকে অবশ্যই সতর্ক হওয়ার মরামর্শ দেন তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকার সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘তালিকার কিছু ভবনকে অপসারণ করা হয়েছে। আরও কিছু ভবনের প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে শাবিপ্রবির বিষেশজ্ঞ দ্বারা সংস্কার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ভবনগুলো অপসারণে জরুরী নোটিশ জারী করা হয়েছে।‘
রেজাই রাফিন বলেন, ‘ঝুকি মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন চলাচলে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য নগরীর সংকীর্ণ রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু সরু রাস্তা রয়েছে। জমির মালিকগণ রাস্তার জন্য জমি দিলে এগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রশস্ত করা হবে।‘
ভূমিকম্পের ঝুঁকি, ভূমিকম্প, ঝুঁকিপূর্ণ, সিলেট ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ভূমিকম্প সিলেট, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি, ভূমিকম্পের ঝুঁকি সিলেট, সিলেট নগরী